প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার

প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার

 

عن أَبي شُريْحٍ الخُزاعيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ: مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللَّهِ والْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إلى جارِهِ. (صحيح مسلم، حديث رقم: ٤٧). وفي رواية البخاري: مَن كانَ يُؤْمِنُ باللَّهِ واليَومِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، (صحيح البخاري، حديث رقم: ٦٠١٩)

আবু শুরাইহ আল-খুযাই (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)  বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করে।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৪৭; সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৬০১৯)।

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

এই হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার করার উপর জোর দিয়েছেন। ইসলাম আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদয় হওয়ার এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার অন্যায় না করার নির্দেশ দেয়। এটি সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, একজন প্রকৃত মুসলিম তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ না করলে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারে না।

عن عبدِاللَّه بن عمرو رضي اللَّه عنهما قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّه ﷺ: خَيْرُ الجِيرَانِ عِنْدَ اللَّه تَعَالَى خيْرُهُمْ لجارِهِ (رواه الترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর জন্য সর্বোত্তম।” তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ১৯৪৪; তিনি বলেছেন, এটি একটি হাসান হাদিস।

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

একজন মুমিনের উচিত প্রতিবেশীর প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করা, যা শুধুমাত্র সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং আধ্যাত্মিক দায়িত্বও। সম্পর্কের উৎকর্ষতার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিজেকে উন্নত করে অন্যের জন্য কল্যাণের উৎস হওয়া উচিত। ইসলামে ভালো প্রতিবেশী হওয়া আল্লাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণ এবং এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে উন্নতি আনে।

১. প্রতিবেশীর ক্ষতি না করা

عَن هريرة رَضِيَ اللهُ عَنْه أن النبي ﷺ قال: وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ. قِيلَ: وَمَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. أخرجه البخاري، كتاب الأدب، باب إثم من لا يأمن جاره بوائقه، (8/ 10)، رقم: (6016)

নবী (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর কসম, সে মুমিন হতে পারে না। আল্লাহর কসম, সে মুমিন হতে পারে না। আল্লাহর কসম, সে মুমিন হতে পারে না। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, কে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে তার কষ্ট থেকে নিরাপদ রাখতে পারে না।” সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬০১৬

عَن أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: “لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ”. أخرجه مسلم، كتاب الإيمان، باب بيان إيذاء الجار، (1/ 68)، رقم: (46)

নবী (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে নিজের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৪৬।

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, একজন মুমিন তার প্রতিবেশীর নিরাপত্তার বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। যদি কোনো মুসলমানের আচরণে তার প্রতিবেশী কষ্ট পায়, তবে তার ঈমানের সম্পূর্ণতা আসে না। তাই, ইসলাম আমাদের প্রতিবেশীর নিরাপত্তা এবং শান্তি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়।

২. প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়া

عن أَبي شُريْحٍ الخُزاعيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ: مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللَّهِ والْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إلى جارِهِ

আবু শুরাইহ আল-খুযাই (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)  বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭)

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

ইসলাম প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার করার নির্দেশ দিয়েছে। এই হাদিসটি নির্দেশ করে যে, ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসের এক প্রমাণ হলো প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা। একজন মুসলিমের উচিত তার প্রতিবেশীর সঙ্গে উদার ও সদয় আচরণ করা।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: لَيْسَ المُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “সে মুমিন নয়, যে নিজে পরিতৃপ্ত থাকে অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।” মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৯৬৭৫

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

একজন মুসলমানের জন্য তার প্রতিবেশীর প্রয়োজনের প্রতি সংবেদনশীল থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই হাদিসটি পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করে যে, একজন মুমিন যদি নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর তার প্রতিবেশীর কষ্টকে উপেক্ষা করে, তবে তার ঈমানের পূর্ণতা নেই। প্রতিবেশীর প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করা ঈমানের অংশ।

৩. প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা

مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “জিব্রাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এমনভাবে উপদেশ দিতে থাকলেন, যে আমি মনে করেছিলাম তিনি তাকে (প্রতিবেশীকে) ওয়ারিস হিসেবে নিযুক্ত করবেন।” সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬০১৫

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, প্রতিবেশীর অধিকার ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জিব্রাইল (আ.) বার বার রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতেন, যা ইঙ্গিত করে যে তাদের অধিকার রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন মুসলিমকে তার প্রতিবেশীর প্রয়োজন এবং স্বার্থের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

৪. প্রতিবেশীর প্রতি সেবা করা

خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيْرُ الجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম বন্ধু সেই, যে তার বন্ধুর প্রতি ভালো আচরণ করে। এবং আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সেই, যে তার প্রতিবেশীর প্রতি উত্তম আচরণ করে।” সুনান তিরমিজি, হাদীস নং ১৯৪৪

এই হাদিসের শিক্ষাঃ

এই হাদিস থেকে জানা যায়, একজন মুমিনের প্রকৃত সফলতা হলো তার বন্ধু এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা। ইসলাম শুধু আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেই নয়, বরং প্রতিবেশীদের প্রতিও সদাচার এবং সেবা করার ওপর জোর দেয়। আল্লাহর কাছে সেরা প্রতিবেশী সেই, যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করে।

উপসংহার

উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার ও প্রতি সদাচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিনের ঈমান তার প্রতিবেশীর প্রতি আচরণ দ্বারা প্রকাশিত হয়। তাই আমাদের উচিত আমাদের প্রতিবেশীর প্রয়োজন, সুরক্ষা এবং শান্তি নিশ্চিত করা এবং তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা ও উদারতা দেখানো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top